Header Ads

Header ADS

একবসাতে দেখেছিলাম 'অপুত্রয়ী': মার্টিন স্করসেজি

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ লেখা এক নিবন্ধে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি নিজের ভালোবাসা জ্ঞাপন করেছেন অস্কারজয়ী পরিচালিক মার্টিন স্করসেজি।

সিনেমার ইতিহাস অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র। আর এই ছোট ইতিহাসের পাতা থেকে যাদের নামগুলো আমাদের সকলের জানা দরকার, তাদের মধ্যে একজন হলেন সত্যজিৎ রায়। শুধু নাম জানা নয়, তার সিনেমাগুলোও আমাদের সবার দেখা দরকার। একবার, দুবার নয়, বারবার দেখা দরকার। আর খুব ঘনঘনই আমি তার সিনেমাগুলো দেখতে বসে যাই।

scorsese
মার্টিন স্করসেজি। ছবি: esquireme.com
আমরা যারা এখানে পশ্চিমের মানুষ, অপুত্রয়ী আমাদের কাছে মাইলস্টোনের মতো ছিল। সেই পঞ্চাশের দশকে আমরা যে সিনেমায় ভারতবর্ষ দেখতাম না, তা নয়, কিন্তু যা দেখতাম তা ছিল পুরোদস্তুর ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণসম্পন্ন দর্শনানুভূতি। আমাদের দেখা ওসব চলচ্চিত্রগুলোতে প্রধান চরিত্রগুলো থাকত পশ্চিমাদের। এর বাইরে 'এক্সট্রা'রা, যাদের কল্যাণে সিনেমার স্থানীয় রূপ বিশ্বাসযোগ্য হতো, যারা ব্যাকগ্রাউন্ডটাকে জীবন্ত করে তুলতেন তারা হতেন সবাই ভারতীয়। আমরা ঠাহরই করতে পারতাম না সিনেমার সেটিং ঠিক কোথায়। ঘটনাগুলো কি গুজরাটে ঘটছে, নাকি কাশ্মীরে, অথবা বাংলা বা মহারাষ্ট্রে? তখন সবকিছু একাকার হয়ে আমাদের সামনে তা নিছক 'হিন্দুস্তান' হিসেবেই ফুটে উঠতো।

জ্যঁ রেনোয়া'র ফিল্ম দ্য রিভার বের হয় ১৯৫১ সালে। সত্যজিৎ রায় সিনেমাটির লোকেশন খুঁজে দিতে পরিচালককে সাহায্য করেছিলেন। দ্য রিভার আমাদের কাছে একেবারে ভিন্নরকমের অভিজ্ঞতা ছিল। সিনেমাটি বানানো হয়েছিল ইন্ডিয়ার প্রতি, বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি এক নিগূঢ় ভালোবাসা থেকে। কিন্তু সিনেমার মূল চরিত্রগুলোতে যারা অভিনয় করেছিলেন তারা হয় ইংরেজ নয়তো আমেরিকান ছিলেন (শুধু মেলানি চরিত্রটিতে রাধা বার্নিয়ের অভিনয় করেন)।

ray
সত্যজিৎ রায়। ছবি সৌজন্য নিমাই ঘোষ

সুতরাং, পশ্চিমে বসে প্রথমবারের মতো অপুত্রয়ী দেখা আমাদের জন্য প্রেষণাপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল। ভারতীয় সিনেমা প্রসঙ্গে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিল এই সিনেমাগুলো। বলা যায় বেশ নাড়িয়ে দিয়েছিল এই কাজগুলো। যেসব মানুষেরা আগে সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকতেন, তারাই এখন সরাসরি ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়িয়ে মূল চরিত্রে জীবনদান করলেন। এই সিনেমাগুলো দৈনন্দিন জীবনের গল্প এমন কৌশলে বললো যে তার সাথে ইতালিয়ান নব্য-বাস্তববাদের বিশেষ সাদৃশ্য পাওয়া গেল। আর সিনেমার কারুকার্য? ফিল্মমেকিং? এসব দেখে বিস্ময়ে আমার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো! মহাকাব্যিক, অকপট, অসীম, প্রগাঢ়; সবরকম নান্দনিক শ্রেষ্ঠত্বের এ যেন এক অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন!

ম্যানহাটনের এক প্রেক্ষাগৃহে আমি একবসাতেই পথের পাঁচালী, অপরাজিতা, আর অপুর সংসার দেখে ফেললাম। চমৎকৃত হলাম সিনেমাগুলোর শ্রেষ্ঠত্বে। পথের পাঁচালীতে অপু'র চোখজোড়ার সেই অনিন্দ্য ক্লোজ-আপ শটটি, বা রবি শঙ্করের সঙ্গীতের সহসা গুরুরাগের সাথে তাল মিলিয়ে কাট- আমার কাছে সেগুলো ছিল সিনেমা হলে পাওয়া অনুধাবনের মূহুর্তগুলোর অন্যতম অভিজ্ঞতা। একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে এই মুহূর্তগুলো আমার নিকট এক বিশেষ অন্তর্নিহিত স্থায়ী প্রভাব রেখেছিল। আর এই ত্রয়ীটা তো সিনেমার ইতিহাসের একজন প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তির কেবল শুরু ছিল।

আমাদের সকলকে সত্যজিতের সিনেমা দেখতে হবে। একবার দেখলে আবার দেখতে হবে, বারবার দেখতে হবে। সত্যজিতের সার্বিক কাজগুলো আমাদের সিনেমার মহামূল্যবান সম্পদের একটি বিশেষ অংশ।


No comments

Theme images by alacatr. Powered by Blogger.