আদর্শ হিন্দু হোটেল
আশায় বাঁচে চাষা। আমাদের হাজারি ঠাকুরও শেষ পর্যন্ত তার আশার জোরে বেঁচেবর্তে রইলেন। বেচু চক্কত্তির হোটেলে আধপেট খেয়ে পদ্মঝির লাথিঝাঁটা মুখ বুজে সয়ে গেছেন শুধু তার মনের কোণে একটা আশার ঝিলিক ছিল বলে। নিজের ওপর তার খুব বেশি বিশ্বাস ছিল। সে বিশ্বাস আর কপালগুণে শেষ পর্যন্ত রাণাঘাটে নিজের হোটেল খুলে ফেললেন হাজারি ঠাকুর। পাঠক আনন্দিত হলো। সে আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে হাজারি ঠাকুর এবার রেলওয়ের আধুনিক হোটেলের ভারও নিয়ে নিলেন। বেশ জমলো সব। একসময় যারা ছিল অধিপতি তারা আজ ধীরে ধীরে তেজরহিত হলো। এ যেন সত্যের জয় আর অধর্মের পরাজয়ের চিরাচরিত গল্প। তবে পুরোপুরি ভিন্ন স্বাদের।
প্রকৃতিকে পাঠকের মনের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা বিভূতিভূষণের। এখানেও তার ব্যত্যয় হয়নি। বুনো বাঙ্গালাদেশ বিভূতির হাতে, হাজারি ঠাকুরের অস্তিত্বে কী স্পষ্ট, মোহিতরূপেই না জেগেছে। বাংলায় গ্রামের পর গ্রাম জনমানবরহিত, সেগুলো আমা-কাঁঠালের জঙ্গলের আদিমতায় আর প্রাণে ডুবে আছে, এ চিন্তা এখন করতে গেলেও মনে শিহরণ জাগে। এত সবুজ ছিল আমাদের, সব ধ্বংস করে দিয়েছি! আর বাংলার মানুষের মনখানা এত বিশাল! কোথায় হারিয়ে গেল সব?হাজারি ঠাকুর একটু বেশিই সহজসরল ছিলেন। তার সততা তাকে জিতিয়েছে। আক্ষেপ হলো আজকের বাঙ্গালাদেশে হাজারি ঠাকুরেরা একদম টিকতে পারবে না। কারণ আমাদের সব সবুজ যে আমরা বিনষ্ট করে ফেলেছি, এখানে এখন পাপের লড়াই।
চরিত্র: হাজারি ঠাকুর (চক্রবর্তী) (প্রোটাগনিস্ট), বেচু চক্কত্তি (হাজারির মালিক), পদ্মঝি (বেচু'র হোটেলের ঝি, আদতে সর্বেসর্বা), যদু বাঁড়ুয্যে (অপর হোটেলে মালিক), কুসুম (হাজারির ধর্মকন্যা, হোটেল খোলার মূলধন দিয়েছিল), টেঁপি/আশালতা (হাজারির মেয়ে), হরিচরণ (হাজারির গ্রামের জমিদার), অতসী (হরিচরণের মেয়ে, টেঁপির বান্ধবী), নরেন (টেঁপির স্বামী)।
No comments