Header Ads

Header ADS

দ্য অ্যাডভেঞ্চার অভ অ্যান এলিফেন্ট হান্টার

সেই কবে কেনেথ অ্যান্ডারসনের শিকার কাহিনী পড়েছিলাম! রকিব হাসানের অনুবাদে। সেটা অবশ্য ছিল বাঘ শিকারের গল্প। বাঘ শিকারের গল্পগুলোতে বেশি থ্রিল আর সাসপেন্স থাকে। একেবারে 'হাইলি সাসপিশিয়াস' হয়। এই বুঝি ঝোপের আড়াল থেকে মূর্তিমান যমদূতসম হলদে ডোরাকাটা বাঘ বেরিয়ে এসে শিকারির পিলে চমকে দিলো! কিন্তু সাদরল্যান্ড ছিলেন হাতি শিকারী। হাতি শিকারের কাহিনীগুলোতে এসবের তেমন একটা বালাই নেই, হাতির মতই মোটা ধরণের থ্রিল। এই ট্রেইল ধরে অনুসরণ করো রে, তারপর দেখা পেলে জায়গামতো গুলি করো রে- গুলিটা ঠিক জায়গায় না লাগলে কিন্তু শিকারির নিজেরই খেল খতম। চোখ, নাহয় কানের ফুটো- এদুটো একেবারে মোক্ষম টার্গেট, বুলেট একদম ব্রহ্মতালুতে চলে যায়। আর হাতিটাও কিছু বুঝে ওঠার আগে ওই বিশাল বপু নিয়ে আছাড় খায় মাটিতে। এই দেখ কাণ্ড, কোথা থেকে কই চলে এলাম! বলছি মিলন গাঙ্গুলি'র অনূদিত জেমস এইচ. "জিম" সাদারল্যান্ডের দ্য অ্যাডভেঞ্চার অভ অ্যান এলিফেন্ট হান্টার বইটার কথা।

The Adventures Of An Elephant Hunter (translated) Cover

আফ্রিকার জঙ্গলে শিকার করার জন্য যেমন সাহস লাগে, তেমনি জানতে হয় জঙ্গলের অনেক হিসেব-নিকেশ। আদিম, বুনো এই অরণ্যে রয়েছে অসংখ্য রহস্য, ভয়ংকর সব শ্বাপদ। এই জঙ্গলেই প্রায় এক দশক শিকার করে কাটিয়েছেন স্কটিশ শিকারি জেমস সাদারল্যান্ড। তাঁর লেখা নিজের শিকার কাহিনীকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মিলন গাঙ্গুলি। অনুবাদক অবশ্য নিজের মত করে লিখেছেন, মাঝে মাঝে কিছু রসযোগ করেছেন আমাদের আঙ্গিকে, একেবারে ধরাবাঁধা আক্ষরিক অনুবাদ নয় কিন্তু। সাদারল্যান্ডের সব ভয়ংকর সুন্দর শিকার কাহিনীগুলোর পাশাপাশি তার জঙ্গুলে জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনারও বর্ণনাও আছে বইটিতে। আর আছে আফ্রিকান জংলী আদিবাসীদের জীবনযাপনের খন্ডচিত্র। এই যেমন তাদের অদ্ভুত সব খাবারদাবার, ভয়ংকর সব বিষ বানানোর গল্প ইত্যাদি। সবচেয়ে ভালো কথা হলো, বইটিতে আছে আফ্রিকার জঙ্গল আর বুনো প্রকৃতির ঝরঝরে বর্ণনা, যেটি অনুবাদক খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। মনে হচ্ছিল সাদারল্যান্ডের থ্রি নট থ্রি রাইফলটা আমি কাঁধে নিয়ে হেঁটে চলছি বুনো অরণ্যের ভেতর হাতির ফেলে যাওয়া ট্রেইল ধরে। আবার কখনো চিতা শিকার, বুনো মহিষের পেছনে তাড়া করা বা মানুষখেকো কুমির শায়েস্তা করা। অথবা, আফ্রিকার ভীষণ গরমে সার্ভাইভিং!

যদিও সাদারল্যান্ডের মূল বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশ আর পরিচ্ছেদও আছে ত্রিশের উপর, মিলন গাঙ্গুলি তার অনুবাদে মাত্র বিশটার মত চ্যাপ্টার করেছেন। এখানে লেখকের কাছে অনুযোগ করা যেতেই পারে যে বইটির সাইজ আরেকটু বড় করতেই পারতেন তিনি। তাছাড়া মূল বইয়ে সাদারল্যান্ডের তোলা অনেকগুলো ছবি আছে। যদিও অনুবাদের বইতে ছবিগুলো দেওয়া হয়তো যুক্তিসংগত নয় বা সম্ভবও নয়, কিন্তু তারপরও বইটা পড়ে মনে হলো, একটু তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গিয়েছে।

দীর্ঘ শিকারি জীবনে সাদারল্যান্ড প্রায় ১৩০০ থেকে ১৬০০ হাতি শিকার করেছেন। তার কপালে জুটেছিল 'ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট এলিফ্যান্ট হান্টার' খেতাবটিও। জঙ্গলের এই আদিম সৌন্দর্যগুলো সাদরল্যান্ডের মত লোকদের কারণে ধীরে ধীরে মলিন হয়ে গেছে। এখনো পোচারদের হাত থেকে কী রক্ষা করা যাচ্ছে টিকে থাকা আর বাকিটুকু সৌন্দর্য?

নিজের বইয়ে আফ্রিকার আদিবাসীদের বিষ বিষয়ক বিদ্যার কথা তুলে ধরেছিলেন সাদারল্যান্ড। এই আদিবাসীরা শত্রুকে এমন কৌশলে বিষ দেয় যে ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায় না। যদিও সাদারল্যান্ড আদিবাসীদের মাঝে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন, তবুও শেষ পর্যন্ত এই বিষই তার মৃত্যুর কারণ হলো। এজেন্ডে (Azande) নামক উত্তর-মধ্য আফ্রিকার এক আদিবাসী গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করল। যদিও এ যাত্রায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন তবে আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, বিষের প্রভাবে পরবর্তীসময়ে ২৬ জুন ১৯৩২ সালে এই দুঃসাহসী শিকারী মৃত্যুবরণ করেন।

প্রথম প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ 

No comments

Theme images by alacatr. Powered by Blogger.