ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়ি
(স্থান: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সেমিনার কক্ষ। দৃশ্য: শার্লক হোমস আর ওয়াটসন দরজা দিয়ে ঢুকে সবে চেয়ারে বসছে। দুজনেই হাঁপাচ্ছে।)
হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, 'এত নির্বিকারচিত্তে টিচারদের লিফটে উঠে যেতে চাইলে যে মনে হলো ওটা চাইলেই আমরা ব্যবহার করতে পারি।'
চেয়ারে বসলো হোমস। স্যানিটাইজারের মুখ খুলে হাতে স্প্রে করতে করতে বললো, 'তুমি সব বোঝো ঠিকই, কিন্তু মুখ ফুটে প্রতিবাদ করো না- তোমার সঙ্গে আমরা তফাত সেখানেই। আচ্ছা, ধরো নিচের পার্কিং লট থেকে এই ডিপার্টমেন্টে ওঠবার সিঁড়ি তুমি দেখেছ?'
'কী আশ্চর্য! মাত্রই তো উঠলাম।'
'এ নিয়ে কতবার উঠেছ?'
'ক্লাস খুললো তো সবে ১৬ তারিখে। আজ মাত্র ১৯ তারিখ। তাও এ তিন দিনে নিদেনপক্ষে চার-পাঁচবারইতো লিফট না পেয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়েছে।'
'ক-টা ধাপ আছে সিঁড়িতে?'
'তা তো বলতে পারব না।'
'কিন্তু আমি পারব। কেননা, তুমি শুধু উঠেই গেছ, ভাবোনি ওদের অব্যবস্থাপনার কারণে কতটা অপ্রয়োজনীয় কষ্ট তোমাকে করতে হয়েছে- আমি ভেবেছি। ২৩১টা ধাপ আছে সিঁড়িতে। প্রতিটা সিঁড়ি ভাঙতে খরচ হয় ০.৪২ ক্যালরি। সেদিক থেকে তোমার প্রায় ১০০ ক্যালরি চলে যাচ্ছে নয়তলায় উঠতে। হলে যা খাও, তা-তে সকাল সকাল ১০০ ক্যালরি এভাবে অপচয় করাটা বড্ড বিলাসিতা না? …তোমাকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি,’ প্যান্টের বাঁ পকেট থেকে ফোন ব্যবহার করে ফেইসবুক খুলে কিছু একটা ঘেঁটে আমার দিকে এগিয়ে দিলো হোমস, ‘ভালো করে পড়ো।’
একটা পোস্ট, মাঝারি সাইজের। সাথে একটা ছবিও আছে। পোস্টের বিষয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলাদা লিফট।
বললাম, 'দরকারি আলাপ দেখতে পাচ্ছি। তোমার কী মনে হয়?'
'এর বিপরীত ডিসকোর্সও তো দেখতে হবে। এ পোস্ট পড়ে তোমার কী মনে হয়?'
'পোস্ট যিনি লিখেছেন, তিনি স্কলার মানুষ। পোস্টেও রীতিমতো ভালো এনগেজমেন্ট।'
'খাঁটি কথা। আজকাল কমেন্টবক্সে এমন নিষ্কলুষ মন্তব্য পাওয়া যায় না, সবাই-ই মোটামুটি তার সাথে একমত হয়েছেন। পোস্টদাতার প্রোফাইল ঘুরে এসো।'
গেলাম। ভদ্রলোক একজন লেখক ও গবেষক। প্রোফাইলে তার কিছু বইয়ের মলাট দেখা যাচ্ছে।...
(স্যাটায়ার। মূল অনুবাদ: অদ্রীশ বর্ধন)
No comments