অতৃপ্তি
ধীরে ধীরে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। মাঝারি গড়নের পাথুরে পাহাড়টার উচ্চতা ৫০ ফিটের বেশি নয়। পাহাড়ের গায়ে একটু সমতল জায়গায় কালো পাথরের আড়ালে ক্যামোফ্লজ পরা লোকটার কটা চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্মিথ অ্যান্ড বেন্ডার টেলিস্কোপ ভেদ করে ওদিকের ছোট বিল্ডিংটার গায়ে সেই কখন থেকে আঠার মতো সেঁটে আছে। সাপ্রেসর লাগানো অ্যাকুরেসি ইন্টারন্যাশনাল’স এল-ইলেভেন-ফাইভ-এথ্রি মডেলের স্নাইপার রাইফলটা একটা বাইপডের ওপর বসানো। ঠিক পাশেই আরেকটা হেকলার অ্যান্ড কক এইচকে৪১৬ নীরবে ঘুমিয়ে আছে। এটার মাথায় এইম্পয়েন্ট কম্পএম৪ স্কোপ, সামনে ভার্টিকাল ফোরগ্রিপ, ব্যারেলে সাপ্রেসর। শীতল, চকচকে দেহের ভেতর সেঁধিয়ে থাকা ৪০ রাউন্ডের স্টিক ম্যাগাজিন আগাগোড়া বুলেট দিয়ে ভর্তি।
সামনের বিল্ডিং-এ চার্লি। স্নাইপার স্কোপে ধরা পড়েছে তার হাতের এম২৪। কোমরের সাথে একটা মাইক্রো উজিও ঝুলতে দেখা গেছে। এ জিনিসটা ভয়ংকর, এর সামনে পড়লে আর রক্ষে নেই। এইচকে৪১৬ গর্জন তুলবার আগেই ওই ছোট্ট জিনিসটা থেকে এক পশলা বুলেটবৃষ্টি সুন্দর করে টার্গেটের ওপর স্প্রে করে দিতে পারে। তাই সামনাসামনি না যাওয়াই ভালো, স্নাইপিং-এ-ই কাজ সারতে হবে।
দূরত্ব আন্দাজ প্রায় ৩০০ ফিটের মতো। কিন্তু বাতাস বইছে কিছুটা, উইন্ড-মিটার নেই। তবে এডব্লিউএম-এর ওপর স্বছন্দে ভরসা করা যায়। ইরাকে কানাডিয়ান স্নাইপারের ম্যাকমিলান ট্যাক-৫০ রাইফল দিয়ে দুই কিলোমিটার দূর থেকে নেওয়া কিলশট-টার আগে সবচেয়ে লম্বা দূরতে স্নাইপিং হিটের রেকর্ড ছিল এই এডব্লিউএম-এর ঝুলিতে। ২০০৯ সালে ব্রিটিশ স্নাইপার ক্রেইগ হ্যারিসন এক তালেব-কে শিকার করেন দেড় মাইল দূর থেকে তার এডব্লিউএম দিয়ে। বিল্ডিং-এর ভেতর চার্লির হাতে থাকা এম২৪-ও স্নাইপার হিসেবে দস্তুরমতো ভয়ংকর, কিন্তু রাইফলের চেয়ে জিনিসটা কে চালাচ্ছে সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিল্ডিং-টা দোতলা। ওপরে দুটো জানালা, নিচের একটিমাত্র দরজা আধভেজা। চার্লি কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না ঠিক। হাত বিশেক দূরে থাকা একটা গাছের নিচের ঝোপটার গোড়া থেকে মাটি হঠাত ছিটকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। বোঝা গেল চার্লিও জানে না তার চার্লি ঠিক কোথায় শুয়েছে। স্নিকি বাস্টার্ড।
টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো লোকটা, অন্ধকার আরেকটু গাড় হয়েছে। রাত হয়ে গেলে পাহাড় ছেড়ে নিচে নামতে হবে। টেলিস্কোপে মনোযোগ দিলো সে, একটু আলোর ঝলকানি দেখেছিল দোতলার ডানদিকের জানালাটার পাশে। এম২৪-এর সাপ্রেসর সব আগুন গিলে ফেলতে পারেনি। এডব্লিউএম-টা শক্ত করে চেপে ধরলো, এখনি সুযোগ তার। চার্লি তার জায়গা পাল্টানোর আগে শট নিতে হবে । বোল্ট-টা টেনে চেম্বারে পয়েন্ট থ্রি থ্রি এইট লাপুয়া ম্যাগনাম ৩০০ ইতোমধ্যে লোড করা হয়ে গেছে। এই মহাশক্তিশালী কার্টিজ অনায়াসে ওই পাঁচ ইঞ্চি ইটের দেয়াল ভেদ করে খুলি অদৃশ্য করার ক্ষমতা রাখে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলেছে সে। ট্রিগারে আঙ্গুলে চেপে বসেছে, নখটা সাদা হয়ে গেছে। এখুনি ফায়ারিং পিন কার্টিজের প্রাইমারে চরম ঠোকর হানবে, তারপরই সাড়ে আটশ মিটার মাজল ভেলোসিটি নিয়ে ছুটে যাবে মহাম্যাগনাম।
-----------
কিন্তু একি! হঠাত সব অন্ধকার হয়ে গেল কেন? সন্ধ্যার মরা আলো তো এভাবে এক ঝলকের মধ্যে তড়িৎ বিদেয় হয়না! মোবাইলের ব্যাটারিটা আজকাল বড্ড জ্বালাচ্ছে, যে কোনো সময় না বলেকয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য তিন বছর আমার হেভি অত্যাচারের ঘানি টানছে, তার যৌবন আর কতদিন-ই-বা পুষ্ট থাকবে? আমার শট-টা আর নেওয়া হলো না। হয়তো ওদিক থেকে একটা বুলেট এসে এতক্ষনে আমার অ্যাভাটারকে শুইয়ে দিয়ে চার্লিকে ফার্স্ট বানিয়ে দিয়েছে। ধূর শালা, কত ম্যাচ যে এভাবে হারলাম!
No comments